প্রথম দেখা // Pratham Dekha

প্রথম দেখা // Pratham Dekha preview

প্রথম দেখা

আট বছর আগে আজকের দিনে প্রথম দেখেছিলাম তিস্তাকে…
প্রথম দেখাতেই তার স্নিগ্ধ প্রাণোচ্ছল রূপ বিভোর করেছিল আমাকে ।
শিশির ভেজা সকালের ফুলের মধ্যে যে স্নিগ্ধতা লেগে থাকে,
বৃষ্টির জল গায়ে মেখে সেরকমই স্নিগ্ধ লাগছিল সেদিন তিস্তাকে ।

আমি দূর থেকে দেখেছিলাম তাকে,
কাছে যাবার সুযোগ ও সাহস পাইনি তখন ।
সেও কি দেখেছিল আমায় আড়চোখে ?
জানি না এ অসময়ে কেমন আছে সে এখন ।

আজও কি সে যৌবনোচ্ছল কিশোরীর মতো ছুটে বেড়ায় নুড়ি বিছানো পথে ?
নাকি সেও শান্ত ধীর স্থির হয়েছে সময়ের সাথে সাথে ?
আজও কি সে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে অকারণে ?
নিবিড় বনের নিস্তব্ধতা কি আজও ভেঙে যায় তার সুরেলা গানে ?

আজও কি পাখিদের সঙ্গে আছে তার সুগভীর সখ্যতা ?
আজও কি সে বোঝে বোবা বাতাসের না বলা মনের কথা ?
পথ চলতে চলতে আজও কি সে বুনো ফুল তোলে আঁচল ভরে ?
নিঝুম রাতের অন্ধকারে আজও কি সে আকাশের তারা গোনে ?

আমি তখন ছিলাম না তো একা, সঙ্গীর পাশ থেকে
দুচোখ ভরে দেখেছিলাম তিস্তাকে ।
সময়ের চোরাস্রোতে ভেসে গেছে সম্পর্কের আগল,
সঙ্গীর মুখ হয়ে গেছে আজ ফিকে ।

যাতায়াতের পথে খুবই অল্প পরিসরে আমি বারকয়েক দেখেছিলাম তিস্তা তোমায় ।
তবুও এত দিন বাদে সে দেখাটা উজ্জ্বল হয়ে আছে আমার মনের গোপন গভীর কোণায় ।
সেদিনের মতো আজও ইচ্ছে করে ছুট্টে গিয়ে তোমাকে স্পর্শ করতে ।
ইচ্ছে যে হয় শরীরে শরীর একাকার করে তোমার ছোঁয়া মাখতে ।

ইচ্ছে করে তোমার সঙ্গে সারাটা দিন নিরলস পথ হাঁটতে,
সারাটা রাত তোমার সঙ্গে মাতাল হয়ে জাগতে ।
ইচ্ছে জাগে সকালে উঠে চোখ মেলে তোমারই মুখটা প্রথম দেখতে,
বিকেলের পরন্ত আলোয় তোমার পাশে বসে আগামী দিনের স্বপ্ন বুনতে ।

তিস্তা, জানি কোনোদিনও পারব না তোমায় নিজের করে রাখতে,
আমার একফালি ঘর বড়োই ছোট, কষ্ট হবে তোমার সেখানে থাকতে ।
তোমার স্মৃতিকে স্বযত্নে বাঁচিয়ে রাখবো আমার কাজের অবকাশে,
সবার আড়ালে তোমার জলছবি আঁকবো আমার মনের ক‍্যানভাসে ।

হয়তো এই দুর্যোগ কেটে গেলে কোনো এক নতুন ভোরের সোনালী রোদের ফাঁকে,
তোমার আমার আবার দেখা হবে নাম-না-জানা পাহাড়ি পথের বাঁকে ।
ততদিন তিস্তা তুমি স্রোতস্বিনী নদী হয়ে বয়ে যেও অবিশ্রান্ত একা একা,
বহু দূরে একলা ঘরে বন্দী আমি মনে মনে রোমন্থন করি আমাদের প্রথম দেখা ।

— অন্তরা দত্ত, ১২/৫/২০২০

About প্রথম দেখা // Pratham Dekha

Inspired by a true story this poem is written with double meaning. I’m pretty sure very few will guess the actual story by reading it once 🙂